
স্টাফ রিপোর্টার:
রাজউক কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন জোনে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তৃত অভিযোগ উঠেছে। পূর্বে রাজউকের জোন ৩/২–এ দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন জোন ৪/২–এ। জোন স্থানান্তর হলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ধারা থামেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ অনুযায়ী, রাজধানীর কল্যাণপুর লেকপাড় এলাকার মিনার প্রোপার্টিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবুল কালাম আজাদ তিন লক্ষ টাকা ঘুষ নেন। লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন ইয়াছিন নামের একজন ব্যক্তি। অভিযোগকারীরা জানান, ভবন অনুমোদন ও নির্মাণসংক্রান্ত কাগজপত্র দ্রুত এগিয়ে দিতে এবং পরিদর্শনে ‘সমস্যা না দেখানোর’ আশ্বাস দিয়ে কালাম এ অর্থ গ্রহণ করেন।
এছাড়া মিরপুর এলাকার বাসিন্দা শামিমা রশিদের কাছ থেকেও তিনি দুই লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার দাবি, নির্মাণাধীন ভবনের নথিপত্রে কোন ত্রুটি না ধরার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে পরিদর্শক কালাম এই অর্থ দাবি করেন এবং পরে গ্রহণও করেন। একইভাবে কল্যাণপুর এলাকায় আরেকটি নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। একাধিক ভুক্তভোগীর বক্তব্যে উঠে এসেছে—অবৈধ অর্থ নেওয়াকে আবুল কালাম নিয়মিত ‘প্রক্রিয়ার অংশ’ বলেই দাবি করেন।
রাজউকের ভেতরে ও বাইরে আলোচিত আরেক পরিদর্শক সুলাইমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন ও প্রতিবাদের মুখে সুলাইমানকে দ্রুত চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলেও একই ধরনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আবুল কালাম আজাদ বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষসহ ভুক্তভোগীরা।
রাজউকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন ধরে ‘প্রভাবশালী মহলের’ সহায়তা পেয়ে আসছেন। যার কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কোন বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়নি। এমনকি ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দেওয়ার আগেই তাদের ‘সমাধানের আশ্বাস’ দেখিয়ে নিরব থাকতে বাধ্য করা হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে ভবন নির্মাণে অনিয়মকে উৎসাহিত করছেন এই কর্মকর্তা। আবুল কালামের মতো পরিদর্শকরা দুর্নীতি করলে নিয়মবহির্ভূত ভবন নির্মাণ বেড়ে যায়, যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগীরা দ্রুত তদন্ত ও দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, “একজন পরিদর্শকের দুর্নীতির কারণে পুরো এলাকার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। সুলাইমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে, কিন্তু আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না—এটাই আমাদের প্রশ্ন।”
রাজউক প্রশাসনের প্রতি দাবি—ঘুষ ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং নির্মাণশিল্পে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হোক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ সোহেল চৌধুরী; অফিস: ফিরোজ মার্কেট ২য় তলা, শাপলা চত্বর টেকনাফ। মোবাইল ০১৩২৩৯৩৫৮৬৬
দৈনিক ঢাকার অপরাধ দমন