জুলাই আহত বরুড়ার মুশফিক লড়ছেন জকসুর পরিবহন সম্পাদক পদে


মোঃআনজার শাহ

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে এখন আর শুধু গতানুগতিক মুখ নেই। প্রতিবাদ, আন্দোলন আর গণ-অভ্যুত্থানের অগ্নিপরীক্ষা পেরিয়ে আসা এক নতুন প্রজন্ম এবার নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। তেমনই এক লড়াকু তরুণ, যিনি মাত্র কয়েক মাস আগেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের ছোঁড়া সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়েছিলেন—সেই মুশফিকুর রহমান এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে পরিবহন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের মন্দুক গ্রামের এই ছেলেটি ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেল থেকে একমাত্র বরুড়াবাসী হিসেবে লড়ছেন, আর তার সংগ্রামী পথচলা ইতোমধ্যেই বিশেষ নজর কেড়েছে সবার।
​মুশফিকুর রহমান বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে তার পরিচয় শুধু একজন ছাত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই তিনি ন্যায়বিচার, স্বেচ্ছাসেবা ও সামাজিক উদ্যোগে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

​মুশফিকের কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয়: “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর-বাইরের যে কোনো অন্যায় দেখলে চুপ থাকতে পারিনি কখনো।” এই এক বাক্যই যেন তার প্রতিবাদী সত্তার মূলমন্ত্র।

আন্দোলনের সেই ক্ষত, যা প্রেরণা জোগায়,
​২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মুশফিক ছিলেন ঢাকার রাজপথে সম্মুখ সারির একজন। ১৮ জুলাই আজিমপুর কলোনিতে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হওয়ার ঘটনা তাকে রাতারাতি আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। তার এই আত্মত্যাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

​তবে আঘাত মুশফিককে দমিয়ে দিতে পারেনি। একই বছর দুর্যোগপূর্ণ বন্যায় যখন কুমিল্লা ভাসছিল, তিনি তার সহপাঠীদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করে টানা ১৬ দিন ধরে ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন কুমিল্লা জিলা স্কুল ক্যাম্পে। এই প্রতিকূল সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার অদম্য মানবতাবোধের প্রমাণ।

বরুড়ার গর্ব, জবির দায়িত্ববোধ
​রাজনৈতিক লড়াইয়ের বাইরেও মুশফিকের সামাজিক ভূমিকা অত্যন্ত উজ্জ্বল। ঢাকাস্থ বরুড়া ছাত্রকল্যাণ পরিষদের প্রচার সম্পাদক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। শীতকালে বরুড়ার অসহায় মানুষের কাছে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার মতো মানবিক কর্মসূচিগুলোতে তিনি ছিলেন প্রধান সমন্বয়ক।
​তার সহপাঠীরা বলছেন, মুশফিক কেবল একজন আন্দোলনকারী নন, তিনি একজন দায়িত্বশীল নাগরিকও। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইতিবাচক উদ্যোগে তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।

পরিবহন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের অঙ্গীকার
​জকসুর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে লড়তে এসে মুশফিকের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ। পরিবহন সম্পাদক নির্বাচিত হলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও সময়নিষ্ঠতা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
​তবে তার দৃষ্টি শুধু ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ নয়। বরুড়ার তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে চান তিনি। পাশাপাশি মাদক, বাল্যবিবাহ ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

জনপদের আশা: সংগ্রামী সন্তানের প্রতি আস্থা
​বরুড়ার মানুষ মুশফিককে দেখছেন “অধ্যবসায়ী ও সংগ্রামী ছেলে” হিসেবে। স্থানীয় শিক্ষকরা মনে করছেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে বরুড়ার প্রতিনিধিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানে মুশফিকের এই প্রার্থিতা নতুন প্রজন্মকে রাজনীতি ও সামাজিক দায়িত্বে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করবে।
​মুশফিক বলেন, “আমার লড়াই ব্যক্তিগত স্বার্থের নয়। বরুড়ার পরিবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সেবাই আমার প্রধান লক্ষ্য। সামনে কঠিন পথ, তবুও আশা করি সবাই আমার পাশে থাকবে।”
​আন্দোলনে রক্ত ঝরানো, বন্যায় মানুষের সেবা করা এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে আসার সংকল্প—মুশফিকুর রহমানের এই পথচলা তাকে জকসু নির্বাচনে শুধু একজন প্রার্থী হিসেবে নয়, বরং পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। পাঠকদের মনে প্রশ্ন, এই লড়াকু তারুণ্য কি পারবে জকসুর মাধ্যমে তার স্বপ্নের জবি গড়ে তুলতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *