
কাউসার আহমেদ পনির:
রাজধানীতে মাদক ব্যবসা এখন যেন খোলাখুলিভাবে চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত এলাকাগুলোর একটি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা। এখানকার চিহ্নিত ইয়াবা ডিলার মাসুম সম্প্রতি ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হলেও অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
মাসুমের নিজের ভাষায়, “যার টাকা আছে, তার সব আছে। টাকা দিয়ে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এমনকি প্রশাসনকেও কিনে ফেলা সহজ।” তিনি আরও দাবি করেন, বর্তমানে তাকে আশ্রয় দিচ্ছেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাদল ওরফে ‘টুন্ডা বাদল’। তার ভাষায়, “আমি মাদক ব্যবসা করি—এটা সত্য। বারবার আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। আমার পণ্য ও বিক্রেতা ধরা পড়লেও বিএনপি নেতারা আবার ছাড়িয়ে আনেন।”
যাত্রাবাড়ী থানার ৪৯ নং ওয়ার্ডের ১০ নং আউটফল ইউনিট বহুদিন ধরে মাদকের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় সূত্র বলছে, মাসুম বহু বছর ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কিছু নেতার আশ্রয়ে থেকে সে সিটি পল্লীতে মাদকের পাইকারি বাজার গড়ে তোলে। সরকার পরিবর্তনের পর এবার সে বিএনপির কিছু অসাধু নেতার ছায়ায় ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে।
এই চক্রের অন্যতম সহায়তাকারী হিসেবে উঠে এসেছে সাইফুল ইসলাম বাদলের নাম। ৮ আগস্ট রাত ১১টার দিকে স্থানীয়রা মাসুমের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ধরে ফেলে এবং তার কাছ থেকে ২,০২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। খবর পেয়ে বাদল ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াবা ও আটক ব্যক্তিকে নিয়ে চলে যান।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বাদল বলেন, “২০০০ পিস নয়, আমার কাছে ১০০০ পিস ইয়াবা আছে।” সাংবাদিকরা সংখ্যা ঠিক করে দিলে তিনি যোগ করেন, “১০০০ বা ৫০০০ যাই হোক, এ নিয়ে আগামীকাল সংগঠনিকভাবে বিচার হবে।”
পরদিন ৯ আগস্ট দুপুরে তিনি কয়েকজনকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে ৪৯০ পিস ইয়াবা জমা দেন। থানার এসি নিজে গুনে দেখেননি, বরং এসআই ফরাদকে দায়িত্ব দেন। অবাক করা বিষয় হলো—একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে মাদক রাখা আইনসিদ্ধ কি না, তা নিয়েও কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি।
পরবর্তীতে ওয়ারি বিভাগের ডিসি বলেন, “কোনোভাবেই কোনো নেতা তার নিজ জিম্মায় মাদক রাখতে পারেন না।” অভিযোগ অনুযায়ী, বাদল ২,০০০ পিস ইয়াবার মধ্যে মাত্র ৪৯০ পিস থানায় জমা দেন, আর মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দিয়ে নেন ৩ লাখ টাকা ঘুষ।
সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত ইয়াবার মালিক ১০ নং আউটফল ইউনিটের বিএনপি নেতা সপন, পরিবহনকারী ছিলেন আবুল হোসেন ও মিজান, আর রিসিভার ছিলেন রাসেল।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—উদ্ধার হলো ২০২০ পিস, জমা পড়ল ৪৯০ পিস—তাহলে বাকি ইয়াবা কোথায় গেল, আর মাদক ব্যবসায়ী বা তার গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হলো না?
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাদল সাংবাদিকদের যাত্রাবাড়ী থানার এসির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। এসি জানান, “এখনও গুনে দেখিনি, তবে ৫ প্যাকেট ইয়াবা পেয়েছি।” এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।